পাটনা: নিঃসন্তান মহিলাদের গর্ভবতী করতে পারলেই মিলবে মোটা অঙ্কের টাকা। সেই টাকার পরিমাণ ১০ লাখ টাকা। এমনই বিজ্ঞাপন দিচ্ছিল বিহারের এক সংস্থা। যা দেখে রীতিমত হামলে পড়েন বেশ কয়েকজন যুবক। ফাঁদে পা দিতেই হাতিয়ে নেওয়া হয় লক্ষ লক্ষ টাকা। কিন্তু বেশিদিন এই জালিয়াতি চালাতে পারেনি ওই সংস্থা। তদন্তে নেমে প্রতারণা চক্রের জাল ফাঁস করল বিহার পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের নওয়াদা জেলার কাহুয়ারা গ্রামে। সংস্থা পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছিল, ‘অল ইন্ডিয়া প্রেগন্যান্ট জব সার্ভিস’। ওই সংস্থার আড়ালেই চলছিল ভয়ঙ্কর খেলা। ইতিমধ্যে ঘটনার তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, প্রতারকরা রেজিস্ট্রেশনের নামে যুবকদের থেকে তাঁদের আধারকার্ড, প্যান কার্ড ও ব্যাঙ্ক ডিটেলস নেয় সংস্থাটি। তারপরই শুরু হয় ব্ল্যাকমেলিং। হাতিয়ে নেওয়া হয় লক্ষ লক্ষ টাকা। পুলিশ সূত্রে খবর, বিহারের নাওয়াদা জেলার কাহুয়ারা গ্রাম থেকেই প্রথম অভিযোগ আসে পুলিশের কাছে। তদন্তে নামে পুলিশ। খোঁজ মেলে সেই ভুয়ো সংস্থার। তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিহার পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত তিনজন নওয়াদা জেলার কাহুয়ারা গ্রাম থেকে এই চক্র চালাতেন। ধৃতদের নাম প্রিন্স রাজ, ভোলা কুমার এবং রাহুল কুমার। তাঁদের কাছ থেকে ছ’টি মোবাই উদ্ধার করা হয়েছে। সেই ফোনগুলি দিয়েই তাঁরা সকলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। মোবাইলগুলি থেকে বহু তথ্যও উদ্ধার করা হয়েছে।
কীভাবে চলত প্রতারণা:
প্রথমে তাঁরা ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিতেন। সেখানে লেখা থাকত ‘অল ইন্ডিয়া প্রেগন্যান্ট জব সার্ভিস’। এছাড়াও লেখা থাকত তাঁরা এসকর্ট পরিষেবাও দিয়ে থাকেন। সেই বিজ্ঞাপন দেখে কেউ ফোন করলে তাঁদের কাছে রেজিস্ট্রেশনের নাম করে প্যান কার্ড বা আধার কার্ডের তথ্য চাওয়া হত। এরপর একটি সেলফি চাও হত। এর পরেই আসল খেলা। রেজিস্ট্রেশন এবং হোটেল বুকিংয়ের নাম করে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা চাওয়া হত। টাকা অ্যাকাউন্টে ঢোকার পরেই ফাঁদে পড়া ব্যক্তির সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতেন প্রতারকরা।পুলিশ জানিয়েছে, এই প্রলোভনেই অনেকেই পা দিয়ে দেন। আর তাতেই ঘটে বিপদ। কোম্পানিতে রেজিস্ট্রেশনের নামে তাঁদের আধার কার্ড, প্যান কার্ড ও ব্যাঙ্ক ডিটেলস হাতিয়ে নিত প্রতারকরা। তারপর শুরু হত ব্ল্যাকমেলিং। টাকার জন্য ক্রমাগত চাপ দেওয়া হত। কেউ কেউ ভয় পেয়ে মোটা টাকা দিয়েও দিতেন। তাঁদের মধ্যেই একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়।
গত বছরের নভেম্বরে, বিহারে একই ধরণের একটি প্রতারণার খবর সামনে আসে যেখানে ফেসবুকে বেকার যুবকদের পিতৃত্বের বিনিময়ে সহজ অর্থ উপার্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিশানা করা হয়েছিল। এদিকে সম্প্রতি সাইবার প্রতারণা থেকে ডিজিটাল অ্যারেস্ট, এরকম নানা পন্থায় দেশজুড়ে জালিয়াতির জাল বিছিয়েছে প্রতারকরা। যাদের ফাঁদে পা দিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।