মায়ানমারের ৪২ শতাংশ ভূখণ্ডই বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে, চাপের মুখে জান্তা

শেয়ার করুন

নেপিডো: প্রায় চার বছর আগে এক সকালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে সেনাপ্রধান মিন অং হ্ল্যাইং নেতৃত্বাধীন মায়ানমারের সামরিক জান্তা। সশস্ত্র জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কাছে নতুন নতুন ভূখণ্ড হারিয়ে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে তাঁর সরকার। মায়ানমারের সামরিক জান্তা ২০২৪ সালে দেশের একের পর এক ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। গত ৮ ডিসেম্বর রাখাইন রাজ্যের মংডুর নিয়ন্ত্রণ হারায় জান্তা বাহিনী। এরপর ২০ ডিসেম্বর রাখাইন রাজ্যের আঞ্চলিক সেনা সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করে রাজ্যটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। এর মধ্যদিয়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়াইয়ে দেশের দ্বিতীয় কোনো আঞ্চলিক সামরিক কমান্ডের নিয়ন্ত্রণ হারায় ক্ষমতাসীন জান্তা।

মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ড রয়েছে ১৪টি। এসব কমান্ডের অধীনে নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে সামরিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এর আগে গত আগস্টে চীন সীমান্তবর্তী শান রাজ্যের রাজধানী লাশিওতে অবস্থিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেয় সেই রাজ্যের বিদ্রোহীরা। এটি ছিল বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে যাওয়া প্রথম কোনো আঞ্চলিক সেনা কমান্ড।

Read More: দেশজুড়ে ২০০-এর বেশি নতুন কারাগার নির্মাণ করেছে চীন

মায়ানমারে জান্তা, বিদ্রোহী লড়াইয়ের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র চিন রাজ্য। রাজ্যটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী চিন ব্রাদারহুড গত ২১ ডিসেম্বর দাবি করে, চিন রাজ্য সামরিক জান্তার হাত থেকে ‘মুক্ত’ করেছে তারা। তাদের দাবি, চিন রাজ্যের ৮০ শতাংশ ভূখণ্ড এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো জোটবদ্ধভাবে জান্তাবিরোধী অভিযান জোরদারের পর থেকে এভাবেই একের পর এক অঞ্চল, সামরিক ঘাঁটি, সামরিক কমান্ড ও ছোট,মাঝারি অধিকাংশ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিদ্রোহীরা। সীমান্ত এলাকাগুলোর অধিকাংশই এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। জান্তা কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে শুধু রাজধানী নেপিডোসহ বড় শহরগুলো।

সেনাবাহিনী সু চির সরকারকে উৎখাতের পর ওই সরকারে থাকা দল ও ব্যক্তিরা মিলে গঠন করে জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি)। দেশের বাইরে থেকে এই সরকার জান্তাবিরোধী তৎপরতায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর পাশাপাশি এনইউজি গঠন করেছে পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) নামের সশস্ত্র একটি বাহিনী। গণতন্ত্রপন্থী তরুণদের নিয়ে এই বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছে। বিদ্রোহীদের সঙ্গে এই তরুণেরা যোগ দেওয়ায় গতি পেয়েছে জান্তাবিরোধী লড়াই।

বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে দেশের মাত্র ২১ শতাংশ ভূখণ্ডে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পেরেছে জান্তা সরকার। এর দ্বিগুণ অর্থাৎ ৪২ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। বাকি অঞ্চলগুলোয় জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের লড়াই চলছে। যেসব অঞ্চলে বিদ্রোহীদের সঙ্গে জান্তা বাহিনীর লড়াই চলছে সেসব অঞ্চলেও এগিয়ে রয়েছে বিদ্রোহীরা। প্রতিদিনই দেশটির কোনো না কোনো এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে জান্তা বাহিনী। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বড় শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া বিদ্রোহীদের জন্য এখন হবে বড় চ্যালেঞ্জ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *