সংবাদ হেডলাইন ডেস্ক: বিশ্বে বাড়ছে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল রাষ্ট্রসংঘ। ইউএন-এর খাদ্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে জানিয়েছে, ২০২৫ সালে প্রায় ১২ কোটি মানুষ অভুক্ত থাকবেন। তারা যে অর্থ জোগাড় করতে পারবে, তাতে ২০২৫ সালে ৩০ কোটি ৭০ লাখ অভুক্ত মানুষের মধ্যে ১১ কোটি ৭০ লাখ মানুষের কাছে খাবার পৌঁছানো যাবে না। রাষ্ট্রসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে তারা মানবিক সাহায্যের জন্য চার হাজার ৯৬০ কোটি টাকা তুলতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ৪৬ শতাংশ অর্থ তুলতে পেরেছে। এদিকে পরপর দ্বিতীয় বছর প্রয়োজনীয় অর্থের অর্ধেকও জোগাড় করতে পারেনি রাষ্ট্রসংঘ। এর ফলে আন্তর্জাতিক সংস্থাটিকে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তারা ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে কম খাবার পৌঁছাতে পেরেছে। বেশ কিছু মানুষের কাছেও সাহায্য পৌঁছে দিতে পারেনি রাষ্ট্রসংঘ। এর প্রভাব কি পড়ছে তা সিরিয়ার মতো অনেক দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি টের পেয়েছেন। রাষ্ট্রসংঘের সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) সিরিয়ায় ৬০ লাখ মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেয়। এই বছরের পরিস্থিতি দেখে তারা জানিয়েছে, ১০ লাখ মানুষের কাছে তারা খাবার পৌঁছে দিতে পারবে বলে আশা করছে।
কেন অনুদান কমছে?
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় সংঘাত, চরম আবহাওয়া এবং ভয়ংকর মুদ্রাস্ফীতির কারণে আরও বেশি করে মানুষের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছানো দরকার হয়ে পড়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রসংঘের তহবিলে যে দেশগুলি অর্থ দেয়, তাদের দেওয়া অর্থের পরিমাণ ক্রমশ কমছে। ধনী দেশগুলিও বর্তমান পরিস্থিতিতে আর্থিক দিক থেকে চাপের মধ্যে আছে। তাছাড়া ঘরোয়া রাজনীতির কারণেও কিছু ধনী দেশ তাদের সিদ্ধান্তে বদল আনছে। রাষ্ট্রসংঘকে যে দেশগুলো প্রচুর অর্থসাহায্য করে তার মধ্যে জার্মানি অন্যতম। কিন্তু ২০২৩-এর তুলনায় ২০২৪ সালে তারা ৫০ কোটি ডলার কম দিয়েছে। তাদের মন্ত্রিসভার সুপারিশ, ২০২৫ সালে একশ কোটি ডলার সাহায্য কম করা হবে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পর নতুন পার্লামেন্ট এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
বিশ্বে ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র গত পাঁচ বছরে ছয় হাজার ৪৫০ কোটি ডলার দিয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের তহবিলের ৩৮ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট আসনে বসলে সেই অনুদান কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইউরোপীয় কমিশন মিলে রাষ্ট্রসংঘের তহবিলের ৫৮ শতাংশ অর্থসাহায্য করে। আর চীন, রাশিয়া ও ভারত মিলে করে মাত্র এক শতাংশ।
চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হলেও ২০২৩ সালে তারা রাষ্ট্রসংঘের মানবিক তহবিলে এক কোটি ১৫ লাখ ডলার দিয়েছে। তারা সাহায্যকারী দেশগুলির তালিকায় ৩২ নম্বরে রয়েছে। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারত আছে ৩৫ নম্বর স্থানে। ২০২৩ সালে তারা রাষ্ট্রসংঘের মানবিক তহবিলে ৬৫ লাখ ডলার দিয়েছে। সবমিলিয়ে প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রসংঘের মানবিক ত্রাণ তহবিলে সাহায্য কমছে। ২০০০ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত রাষ্ট্রসংঘের মানবিক ত্রাণ বিষয়ক প্রধান ছিলেন জ্যান ইগল্যান্ড। তিনি বলেছেন, চীন অলিম্পিকের আয়োজন করতে পারে, ভারত সাত কোটি ৫০ লাখ ডলার দিয়ে চন্দ্রাভিযান করতে পারে, অথচ বিশ্বের ক্ষুধার্ত মানুষদের জন্য তারা আরেকটু অর্থ দিতে পারে না?