সংবাদ হেডলাইন ডেস্ক: দাবানলের গ্রাসে লস অ্যাঞ্জেলস! আগুন ছড়িয়ে পড়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার একাধিক শহরে! পুড়ে খাক হাজার হাজার বাড়ি। দাবানলে পুড়ে ছাই হলিউডও। বন্ধ হয়ে গেছে শুটিং। শোনা যাচ্ছে, বিখ্যাত ‘হলিউড’ লেখাটিও নাকি আগুনে পুড়েছে। আগুনের গ্রাসে বিখ্যাত অভিনেত্রী জেমি লি কার্টিস, প্যারিস হিলটনদের প্রাসাদোপম বাড়িও। আগুনের লেলিহান শিখায় জ্বলতে থাকা বাড়ির ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন খোদ তারকারা। প্রকৃতির রুদ্ররোষে এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৫ জন। ব্যাস্তচ্যুত লক্ষাধিক। ৩০ হাজারের বেশি মানুষকে অন্যত্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই একাধিক জায়গা থেকে এখনও পর্যন্ত ৭০ হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখনও বিভিন্ন জায়গার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরানোর প্রক্রিয়া জারি রয়েছে। একদিকে আগুনের তীব্রতা অন্যদিকে ঝড়ো হাওয়া। প্রকৃতি তাণ্ডব যেন চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে আধুনিক সভ্যতাকে। দাবানলের ভয়াবহতা এতটাই নেভাতে নেভাতে শেষ হয়ে যাচ্ছে জলও।
সূত্রে জানা গিয়েছে, প্যাসিফিক প্যালিসেডস এলাকার অসংখ্য বাড়িঘর ও যানবাহন কয়েক মিনিটের মধ্যে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। কে তারকা? কে আমজনতা দাবানলের রুদ্ররোষে ছাড় পাননি কেউই! নিজেদের রাজপ্রাসাদ ছেড়ে অন্যত্রে আশ্রয় নিয়েছেন তাবড় তাবড় তারকারা। খালি করা হয় কমলা হ্যারিসের বাড়িও। ভয়াবহ এমন দাবানলে পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের লস অ্যাঞ্জেলেসের বাড়িটি খালি করা হয়েছে। তবে কমলা বর্তমানে ওয়াশিংটনে রয়েছেন। এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণে ইতালি সফর বাতিল করেছেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবার বিকালে লস অ্যাঞ্জেলসে গিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানে তিনি পুলিশ, দমকলবাহিনী ও উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে দেখা করেন। ৭ তারিখ এলাকায় আচমকাই দাবানল দেখা যায়৷ মূলত লস অ্যাঞ্জেলসের উত্তর পূর্বে একটি বনাঞ্চল থেকে দাবানলের উৎপত্তি। দমকা হাওয়ার জেরেই সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
GoPro footage of firefighter Joseth Abel Espinoza in action. Just to give an idea of what the firefighters in LA are going through right now. #LosAngeles #la #firerescue #firefighters #CaliforniaWildfires #wildfires #wildfire #California #californiafires pic.twitter.com/PzPQyZWXrf
— Avi (@Rantaramic) January 10, 2025
মঙ্গলবার সন্ধেয় ৭০ কিলোমিটার দমকা হাওয়ার সঙ্গে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে। নির্দিষ্ট জায়গায় তা আবার ১১২ কিলোমিটার বেগে বইতে থাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আগুন। আগুন নেভানোর কাজে দমকলের ১৪০০টিরও বেশি যান ইতিমধ্যেই মোতায়েন করা হয়েছে। সাহায্যে এগিয়ে এসেছে ওরিগন প্রদেশও। সেখান থেকে ২৪০টি ফায়ারফাইটার ও ৬০টি ইঞ্জিন এসে পৌঁছেছে আগুন নেভানোর কাজে। এদিকে ছুটিতে থাকা সকল দমকল কর্মীদের কাজে যোগ দিতে জরুরি নির্দেশিকা জারি করেছে লস অ্যাঞ্জেলস দমকল বিভাগ। দাবানলে সেখানে ১০ হাজারের বেশি একর এলাকা পুড়ে ছাই হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলসের ইতিহাসে যা সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এর আগে ২০০৮ সালে দাবানলের জেরে ৬০৪টি নির্মাণ ধব্বংস হয়েছিল। ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন প্যাসিফিক প্যালিসেডস এলাকার স্থানীয়রা৷ আগুনের লেলিহান শিখা ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে এবং ঐতিহাসিক বেশ কিছু জায়গাও গ্রাস করে নেবে এই দাবানল। আর এই দাবানল নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। ইনস্টাগ্রামে এই দাবানলের একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। তাতে লিখেছেন, প্রত্যেক বিপর্যস্তের জন্য আমার চিন্তা হচ্ছে। আশা করছি আজ রাত্রে আমরা সকলেই নিরাপদে থাকব’।
The White House estimates that California has suffered losses of up to $800 billion so far,
Due to the recent #wildfires #LosAngelesWildfires pic.twitter.com/lYAIGaOWGO— Zenon (@zen0nym0us) January 9, 2025
তবে আকস্মিক দাবানলের কারণ কী? আবহাওয়াবিদরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানিয়েছেন, বৃষ্টিপাতের অভাব, শুকনো জ্বালানি ও প্রবল বাতাস এই দাবনলের অন্যতম কারণ। একদিকে বাতাসের গতিবেগ ৯৯ মাইল প্রতি ঘণ্টায় পৌঁছেছে। তার উপর বৃষ্টিপাতের অভাবে এমনিতেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েই ছিল। শুকিয়ে যাওয়া গাছ, পাতা, ঘাস ধরে দ্রুত বাড়তে থেকেছে আগুন৷ এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন তো রয়েছেই। ফলে দাবানলের তীব্রতা এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে গেছে। পাশাপাশি গত ২২ বছর ধরে এই অঞ্চলে প্রবল শুষ্ক পরিস্থিতি তৈরি হয়েই ছিল৷ জানা গিয়েছে, শেষ ১২০০ বছরের মধ্যে এটাই ছিল সবচেয়ে শুষ্ক সময়।
পালিয়ে বাঁচার অভিজ্ঞতা:
ফোয়াদ ফরিদ একজন ডেটা বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের প্যাসিফিক প্যালিসেডস এলাকায় বসবাস করেন। লস অ্যাঞ্জেলেসের সমুদ্রসৈকত শহর মালিবুতে কাজ থাকায় গত মঙ্গলবার সকালে ফরিদ তাঁর প্যাসিফিক প্যালিসেডস এলাকার বাসা থেকে বের হন। ঠিক এ সময় ফরিদের মুঠোফোনে লস অ্যাঞ্জেলেসে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ দাবানলের বিষয়ে একের পর এক সতর্কবার্তা আসতে থাকে। সতর্কতা বার্তাগুলোয় বলা হয়, দাবানল ফরিদের প্যাসিফিক প্যালিসেডসের বসত এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
এ অবস্থায় ফরিদের আর বাড়িতে ফেরার উপায় ছিল না। কারণ, ইতিমধ্যে প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আর আগুয়ান দাবানল থেকে বাঁচতে গাড়িচালকেরা তাঁদের যানবাহন প্যালিসেডস ড্রাইভে ফেলে চলে গিয়েছিলেন। ফরিদ বলেন, ‘আমার সঙ্গে আমার গাড়ি ও ফোন ছাড়া আর কিছুই নেই। এমনকি আমার সঙ্গে আমার ওষুধও নেই।’ দাবানলের কারণে বাড়িছাড়া হয়ে ফরিদ লস অ্যাঞ্জেলেসের ওয়েস্টউড রিক্রিয়েশন সেন্টারের জিমে আশ্রয় নেন। দাবানল থেকে বাঁচতে যাঁদের ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়েছে, তাঁদের জন্য এই ব্যায়ামাগার অস্থায়ী আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানে আশ্রয় নেওয়া দুর্গত লোকজনকে সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন স্থানীয়রা। তাঁরা দুর্গত লোকদের কম্বল, পোশাক, পানি ও খাবার দিচ্ছেন।
🔴🇺🇸 The death toll from the #wildfires ravaging the #LosAngeles area rose to at least ten, authorities said, even as new fires continued to spring up.
FRANCE 24’s @WassimCornet & @loicpialat met with a homeowner who decided to go back to his neighbourhood for the first time 👇 pic.twitter.com/ugdvEpQlRH
— FRANCE 24 English (@France24_en) January 10, 2025
দাবানল দুর্গতদের সহায়তায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন জেফ হ্যারিস। তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই অস্থায়ী আশ্রয়স্থলে এসে কাজ করছেন। তিনি দুর্গতদের মধ্যে খাবার বিতরণ করছেন। জেফ হ্যারিস বলেন, ‘আমি এখানে শুধু সাহায্য করতেই এসেছি।’ ফরিদ প্যাসিফিক প্যালিসেডসের একমাত্র বাসিন্দা নন, যাঁকে এক কাপড়ে চলে আসতে হয়েছে।
ফরিদের মতো আরেক দুর্গত ব্রায়ান। শুরু তাঁর অ্যাপার্টমেন্ট ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু যখন তিনি দেখেন, লোকজন লাগেজ নিয়ে পালাচ্ছেন, দাবানল ধেঁয়ে আসছে, তখন আর তাঁর বসে থাকার উপায় ছিল না। এ অবস্থায় তিনি তাঁর পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনেন। রিক সিকেত্তি একজন অভিনেতা। চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন মিলিয়ে এক ডজনের বেশি কাজ আছে তাঁর। দাবানল এগিয়ে আসার মুখে তিনি তাঁর গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ও প্রিয় বিড়াল নিয়ে সান্তা মনিকা এলাকার বাড়ি ছাড়েন। রিক বলেন, তিনি ৪২ বছর ধরে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করে আসছেন। এর আগে কখনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে বাড়ি থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে তাঁর দরজায় কড়া নাড়েননি।