দিল্লিতে পদ্ম ঝড়: রাজধানীর মসনদে ফিরছে বিজেপি, লজ্জার হার কেজরিওয়ালের

শেয়ার করুন

নয়াদিল্লি: দিল্লিতে পদ্ম ঝড়ে কুপোকাত আপ। শনিবার ভোট গণনার শুরু থেকে এগিয়ে রয়েছে পদ্ম শিবির। ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছাতে পারেনি কেজরিওয়ালের আপ। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ৪৮ আসনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। ২২ আসনে আম আদমি পার্টি। এই ট্রেন্ড বজায় থাকলে ২৭ বছর পর দিল্লির মসনদ দখল করবে বিজেপি।

কেজরিওয়ালের হার

দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে হেরে গেলেন আপ সুপ্রিমো তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি নয়াদিল্লি আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। সপ্তম রাউন্ডের গণনার পর বিজেপি প্রার্থী প্রবেশ সাহিব সিং ভর্মার কাছে হেরে গেলেন কেজরিওয়াল। বিজেপি প্রার্থীর কাছে ৩১৮২ ভোটে হেরে গেলেন তিনি। এদিকে হার হয়েছে দিল্লির প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রীরও। দিল্লি জংপুরা বিধানসভা কেন্দ্র পরাজিত হয়েছেন প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়ার। বিজেপি প্রার্থী তরবিন্দর সিংহের কাছে মোট ৬০০-ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন তিনি।

আক্ষেপের সুর আপ প্রধানের

দিল্লি দখলের লড়াইয়ে জনতার রায় মেনে নিলেন আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল। রাজধানীর বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে প্রাথমিক ট্রেন্ড এগিয়ে রয়েছে বিজেপিই। ইতিমধ্যে লজ্জার হার হয়েছে কেজরিওয়ালের। হারের পর এদিন এক ভিডিয়ো বার্তায় আপ প্রধান বললেন, ‘রাজনীতিতে ক্ষমতা দখল নয়, জনতার সেবায় এসেছিলাম। আর আজও তাতেই টিকে রয়েছি। দিল্লিবাসীরা যা রায় দিয়েছে, তা আমরা মাথা পেতে নিয়েছি। এবার থেকে একটা ভাল বিরোধী রূপে আমরা কাজে নামব।’এরপরই দলের সকল জয়ী-পরাজিত প্রার্থীদের শুভেচ্ছা জানান তিনি। তাঁর কথায়, ‘প্রত্যেক আমি শুভেচ্ছা জানাই। এই গোটা নির্বাচন পর্বে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন সবাই।’

পরাজয়ে খোঁচা আন্না-আবদুল্লার

প্রাথমিক ট্রেন্ডে বিজেপি এগিয়ে যেতেই ইন্ডিয়া জোটের দুই শরিক আপ ও কংগ্রেসকে খোঁচা দিলেন ইন্ডিয়া জোটের আর এক শরিক ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ও জম্মু কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। তিনি বলেন, “আরও নিজেদের মধ্যে লড়াই করো।” এক্স হ্যান্ডলে আবদুল্লা লিখেছেন, ‘জি ভরকে লড়ো। সমাপ্ত করদো এক দুসরে কো।’

কেজরিওয়ালের রাজনীতির শিক্ষাগুরু আন্না হাজারে বলেছেন, “আমি আগে থেকেই বলেছিলাম নির্বাচন লড়ার সময় প্রার্থীর চরিত্র, সু-চিন্তাধারা এবং ভাল ভাবমূর্তি থাকা উচিত। কিন্তু ওরা (আপ) সেটা পারেনি। আবগারি দুর্নীতি থেকে আর্থিক দুর্নীতি, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। সেই জন্যই ওরা কম ভোট পাচ্ছে।” আন্নার বক্তব্য, “মানুষজন দেখেছেন যে ওঁ (কেজরিওয়াল) চরিত্র নিয়ে কথা বলেছে এদিকে নিজের নামই আবগারি নীতি দুর্নীতিতে জড়িয়েছে…রাজনীতিতে অভিযোগ করাই হয়। নিজেকে প্রমাণ করতে হয় যে আমি নির্দোষ। সত্যিটা সত্যিই থাকে। তবেই জনগণ ভরসা করে যে আমার জন্য করার কেউ রয়েছে। মদের প্রসঙ্গ কীভাবে এল? কারণ টাকা, ধন-দৌলতেই ভেসে গেলেন ওঁরা।”

কে হবেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী? চর্চা

দিল্লির মসনদে বসতে চলেছে গেরুয়া শিবির। নির্বাচনের ফলাফলের ট্রেন্ড বলছে, দিল্লিতে বিজেপির সরকার গঠন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। ২৭ বছর পর একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাজধানীতে ফিরছে গেরুয়া শিবির। এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন, কে হবেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী? ইতিমধ্যে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। পদ্মের মুখ্যমন্ত্রীর পদে একাধিক নাম ভেসে উঠছে। তা নিয়েও বিজেপির অন্দরে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছেন বিজেপি নেতা প্রবেশ ভার্মা। দিল্লি নির্বাচনে ‘নতুন দিল্লি’ আসন থেকে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে প্রবেশ ভার্মাকে প্রার্থী করেছিল গেরুয়া শিবির। দিল্লির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী সাহেব সিং ভার্মার সুযোগ্য পুত্র তিনি। পশ্চিম দিল্লি থেকে দু’বার সাংসদ হয়েছিলেন প্রবেশ। পঁচিশের বিধানসভা নির্বাচনে আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে পরাজিত করেছেন তিনি। রাজনৈতিক মহল সূত্রের খবর, দিল্লির মসনদে বসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে তিনিই। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন বিজেপি নেতা দুষ্যন্ত কুমার গৌতম, বিজেন্দ্র গুপ্ত, রমেশ বিধুরী, মনোজ তিওয়ারি, বীরেন্দ্র সচদেব।

মোদির বার্তা

এদিন এক্স হ্যান্ডেলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লেখেন, ‘জনশক্তিই সবার উর্ধ্বে। এই জয় বিকাশ ও সুশাসনের জয়। এই ঐতিহাসিক জয়ের জন্য দিল্লির সকল ভাই-বোনকে আমার অভিনন্দন। আপনারা যে আশীর্বাদ ও স্নেহ দিয়েছেন তার জন্য হৃদয় থেকে ধন্যবাদ জানাই। দিল্লির সামগ্রিক উন্নয়ন ও বাসিন্দাদের জীবন উন্নত করতে আমরা চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখব না। একইসঙ্গে আমরা নিশ্চিত করব বিকশিত ভারতের লক্ষ্যে দিল্লি যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *