নয়াদিল্লি: ইয়েমেনে এক নাগরিককে হত্যার দায়ে ভারতীয় নিমিশা প্রিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া নির্দেশ দিয়েছে দেশটির আদালত। ৫৭ বছর বয়সী নিমিশার মা প্রেমা কুমারী মেয়ের মৃত্যুদণ্ড আটকানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার ভারতের বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, তারা কেরলের নার্স নিমিশা প্রিয়াকে সম্ভাব্য সবরকম সহায়তা করছে।
উল্লেখ্য, নিমিশা প্রিয়া কেরলের পলক্কড় জেলার বাসিন্দা ছিলেন। কর্মসূত্রে ইয়েমেনে নিজের স্বামীর সঙ্গে থাকতেন তিনি। ২০১৪ সালে তাঁর স্বামী এবং মেয়ে ভারতে ফিরে আসে। এদিকে ২০১৬ সালে ইয়েমন থেকে যাতায়তে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারত। সেই সময় ইয়েমেনের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করতেন নিমিশা। সেখানেই তলাত আবদো মেহদির সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরবর্তীতে প্রিয়াকে মেহদি একটি ক্লিনিক খোলার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কারণ ইয়েমেনে কোনও বিদেশি নাগরিক যদি ক্লিনিক খুলতে চায়, তাহলে তাকে স্থানীয় কারও সঙ্গে পার্টনারশিপে তা খুলতে হবে। সেই কারণেই মেহদিকে প্রয়োজন ছিল প্রিয়ার। এই আবহে ২০১৫ সালে মেহদির সাহায্যে ক্লিনিক খোলে প্রিয়া। পরে মেহদির সঙ্গে মতপার্থক্য দেখা দেয় প্রিয়ার। এরপর ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই মেহদিকে ঘুম পাড়ানো ইনজেকশন দেয় প্রিয়া। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, লুকিয়ে রাখা পাসপোর্ট ছিনিয়ে নিয়ে ভারতে ফিরে আসা। তবে সেই ইনজেকশনের ওভারডোজে মৃত্যু হয় মেহদির। প্রিয়া এক বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে মেহদির দেহটি কেটে ক্লিনিকের ট্যাঙ্কে রেখে পালায়। পরে ২০১৮ সালে খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন প্রিয়া। ২০২০ সালে সানার একটি ট্রায়াল কোর্ট তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় এবং ইয়েমেনের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নভেম্বর ২০২৩-এ রায় বহাল রাখে।
এই ব্যবস্থায় মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের অর্থ দিলে তাঁরা ঘাতককে ক্ষমা করে দিতে পারেন। সূত্রের খবর, প্রায় ৫০ মিলিয়ন ইয়েমিনি রিয়াল মুদ্রা চাওয়া হয় ব্লাড মানি হিসাবে। তারপরই ক্ষমা করা হবে নিমিশাকে। এই আবহে বিদেশে গিয়ে মেয়ের প্রাণভিক্ষা চাইতে নিমিশার মাকে অনুমতিও দিয়েছিল দিল্লি হাইকোর্ট। কিন্তু প্রশ্ন হল বিপুল অঙ্কের টাকা কোথায় পাবেন! নিমিশার পরিবার আশা করছেন, তারা তালাল আবদো মাহদির পরিবারকে রক্তের অর্থ প্রদান করবেন। ৫০ মিলিয়ন ইয়েমিনি রিয়াল মুদ্রা দিয়ে নিমিশার প্রাণভিক্ষা চাওয়া হবে।
নিমিশার স্বামী টমি থমাস বলেছেন, “নিমিশার প্রাণ বাঁচাতে অসংখ্য মানুষ আপ্রান চেষ্টা করছেন। আমরা সবাই আশা করছি, মাহদীর পরিবারের সাথে দেখা করে নিমিশাকে ক্ষমা করার আবেদন জানাব। আমাদের একটি মেয়ে রয়েছে, সে তার মায়ের সঙ্গে কথা না বললে থাকতে পারে না। নিমিশার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে মেয়েটি একা হয়ে যাবে। সেটি তাদের বোঝাব।”
Read More: বালাজিকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে: বিস্ফোরক এআই গবেষকের বাবা-মা
রিপোর্ট অনুযায়ী, এক মাসের মধ্যে মৃত্যুদন্ড কার্যকর হতে পারে। যার ফলে নিমিশা প্রিয়ার পরিবার চিন্তিত। কারণ এক মাস খুব কম সময়। অন্যদিকে নিমিশার মা ৫৭ বছর বয়সী প্রেমা কুমারী মৃত্যুদণ্ড আটকানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। চলতি বছরের শুরুতে তিনি ইয়েমেনের রাজধানী সানায় যান। ইয়েমেনে অবস্থিত এনআরআই সমাজকর্মীদের সংগঠন সেভ নিমিশা প্রিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিলের সহায়তায় নিহতের পরিবারের সঙ্গে রক্তের অর্থ প্রদানের বিষয়ে আলোচনা করে। ব্লাড মানি ইয়েমেনের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রথা যা প্রিয়ার সাজা কমিয়ে দিতে পারে।
মঙ্গলবার ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা ইয়েমেনে নিমিশা প্রিয়ার সাজা সম্পর্কে জানি। আমরা বুঝতে পারছি যে প্রিয়ার পরিবার প্রাসঙ্গিক বিকল্পগুলি বিবেচনা করছে। সরকার এই বিষয়ে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নিচ্ছে।’ ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট রাশাদ আল-আলিমি সম্প্রতি নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করার পর এই বিবৃতি দেয় জয়সওয়াল।