তিরুবন্তপুরম: ওয়াকফ আইন নিয়ে বিজয়ন সরকারের উপর চাপ বাড়াচ্ছে কেরলের মুসলিমরা। নয়া আইনের বিরুদ্ধে সর্বত্র প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। বিক্ষোভ-আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে বাম শাসিত রাজ্যের কোনায় কোনায়। ইতিমধ্যে রাজভবন অভিযান করে ওয়াকফ আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন একাধিক মুসলিম সংগঠন। এবার রাজ্য সরকারের উপর চাপ বাড়াচ্ছে বাম শাসিত রাজ্যের সংখ্যালঘুরা। রাজ্যে ওয়াকফ আইন কার্যকর না করার দাবি তুলেছে তারা। এমনকি এই মর্মে রাজ্য বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করারও দাবি তুলেছে মুসলিমরা।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে ও অবিজেপি শাসিত তামিলনাড়ু সরকার সাফ জানিয়েছে তারা রাজ্যে আইন লাগু হতে দেবে না। এমনকি বিল পাশ হওয়ার আগেই ওয়াকফের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব পাশ করে স্টালিন সরকার। একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, বাংলায় তাঁর সরকার এই আইন কার্যকর করবে না। তামিলনাড়ুর মতই কেরলেও ওয়াকফ বিরোধী প্রস্তাব পাশ করার দাবি উঠেছে সর্বত্র। সংখ্যালঘুদের বক্তব্য, ওয়াকফকে শুধুমাত্র আইন হিসেবেই দেখছে না কেরলের মুসলিমরা। নয়া আইনের ফলে তাদের পরিচয়, ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় স্বাধীনতায় সরাসরি হুমকি তৈরি করেছে। এদিকে বাম শাসিত রাজ্যের জমিয়তুল উলামার সাধারণ সম্পাদক টি মুহাম্মদ কুঞ্জি মৌলভী বলেন, “ইতিমধ্যেই তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন। কেরল সরকারের কাছেও একই প্রত্যাশা করছি। বাম সরকারকে প্রমাণ করতে হবে, এই সঙ্কটময় পরিস্থিতে তারা মুসলিমদের সঙ্গে রয়েছে।”
একাধিক মুসলিম সংগঠন আইনকে অগণতান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক বলে আখ্যা দিয়েছে। কেরলের মুসলিম জামাত ফেডারেশনের সভাপতি মৌলবি কাদাক্কাল আবদুল আজিজ কেন্দ্রের সমালোচনা করে বলেন, “এটি কেবল সম্পত্তির বিষয় নয়। এটা হচ্ছে মুসলমানদের দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার পরিকল্পনা। আমরা এটা হতে দেব না। মুসলমানদের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তারা সম্পত্তি রক্ষা করবে। আজ রাজভবন অভিযান হয়েছে, কাল সংসদ ভবন অভিযান হবে।” সংখ্যালঘুদের আশঙ্কা নয়া আইনের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির উপর কবজা করবে কেন্দ্র সরকার।
ওয়াকফ আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশের শীর্ষ আদালতে ২০টিরও বেশি পিটিশন জমা পড়েছে। রাজনৈতিক দল এবং আইন বিশেষজ্ঞরাও প্রশ্ন তুলছেন, কীভাবে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সম্পত্তির অধিকার রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে? ওয়াকফের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন এডভোকেট ইউসুফ রাহমানি। তিনি বলেন, “নতুন আইনটি ওয়াকফ বোর্ডগুলিকে লাগামহীন ক্ষমতা দিয়েছে, যার বেশিরভাগই এখন শাসক দলের অনুগত লোকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। এই আইন মুসলিমদের জমি দখলের পরিকল্পনা।” মুসলিম সংগঠনগুলি প্রশ্ন তুলেছে, “ভারতজুড়ে বিপুল সম্পদের নিয়ন্ত্রণে থাকা হিন্দু সংস্থাগুলোও কেন এ ধরনের হস্তক্ষেপের শিকার হচ্ছে না? বিজেপি সরকার কেন শুধু ওয়াকফ সম্পত্তিকে টার্গেট করছে?” ইতিহাসের অধ্যাপক আবদুল বাসিতের কথায়, “এটি আরএসএস-বিজেপির বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ। প্রথমে তারা তিন তালাক আইন এনেছে, তারপর ৩৭০ ধারা বাতিল করেছে এবং সিএএ মত কালাকানুন এনেছে। এখন তারা আমাদের সম্পত্তির দখল নিতে চাই। এরপর তারা আমাদের মসজিদগুলোও দখল করে নেবে?”