সংবাদ হেডলাইন ডেস্ক: তিন বচর আগের পেগাসাস বির্তক ফের মাথাচাড়া দিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দোষী সাব্যস্ত হল নজরদারি সফ্টওয়্যার পেগাসাস স্পাইওয়্যার নির্মাতা ইসরাইলি সংস্থা এনএসও। বিশ্বজুড়ে ১ হাজার ৪০০ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর মোবাইলে আড়ি পাতার অভিযোগে বার্তা আদান-প্রদানকারী হোয়াটসঅ্যাপের করা এক মামলায় সংস্থাটিকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন নর্থ ক্যালিফোর্নিয়ার ডিস্ট্রিক্ট আদালত। উল্লেখ্য, এনএসও বিভিন্ন দেশের সরকারের জন্য এই স্পাইওয়্যার তৈরি করেছিল, যাতে সরকার প্রয়োজনে যে কারো ফোনে আড়ি পাততে পারে। হোয়াটসঅ্যাপ-এর মালিক সংস্থা মেটা ২০১৯ সালের মে মাসে মার্কিন আদালতে এনএসও গ্রুপ টেকনোলজিস-এর বিরুদ্ধে মামলা করে। মেটার অভিযোগ ছিল, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের মোবাইল ডিভাইসে গোপনে নজরদারি সফ্টওয়্যার পেগাসাস ইনস্টল করতে মেসেজিং অ্যাপের একটি দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েছিল এনএসও। পাঁচ বছর পর সেই মামলার রায় এল। আদালত বলেছেন, এনএসও আইন লঙ্ঘন করেছে। এনএসও যুক্তি দিয়েছিল, তাদের থেকে যারা পেগাসাস স্পাইওয়্যার কিনছে, তারা কীভাবে সেটা কাজে লাগাচ্ছে, সেই দায় তাদের নয়। তবে আদালত এই যুক্তি খারিজ করে দিয়েছেন। নর্থ ক্যালিফোর্নিয়ার ডিস্ট্রিক্ট আদালতের বিচারক ফিলিস হ্যামিলটন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের হ্যাকিং আইনের পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপের নিজস্ব পরিষেবার শর্তাবলিও লঙ্ঘন করেছে কোম্পানিটি। এর জন্য তাদেরকে হোয়াটসঅ্যাপকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।” ক্ষতিপূরণের অর্থ কত হবে তা নির্ধারণ করতে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের মার্চ মাসে এক আলাদা জুরি বিচারের মুখোমুখি হতে এনএসও গ্রুপকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালতের এই রায়কে পেগাসাস স্পাইওয়্যার নির্মাতা এনএসও-এর বিরুদ্ধে এক বড় জয় হিসেবে অভিহিত করেছে হোয়াটসঅ্যাপ। কোম্পানিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘পাঁচ বছর ধরে মামলা চলার পর আজকের এই সিদ্ধান্তের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হোয়াটসঅ্যাপ, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও নাগরিকদের ওপর বেআইনি সাইবার হামলার জন্য আর দায় এড়াতে পারবে না এনএসও। এই রায়ের মাধ্যমে বিভিন্ন স্পাইওয়্যার কোম্পানিকেও সতর্ক হতে হবে। কারণ তাদের বেআইনি কর্মকাণ্ড আর সহ্য করা হবে না। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বিশ্বজুড়ে তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার নানা ধরনের অভিযোগ প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়। এজন্য বিভিন্ন স্পাইওয়্যার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বহুল আলোচিত স্পাইওয়্যার হল ইসরাইলি একটি সংস্থা কর্তৃক উদ্ভাবিত পেগাসাস স্পাইওয়্যার। ইসরাইলি সংস্থা এনএসও গ্রুপের তৈরি এই পেগাসাস স্পাইওয়্যার দিয়ে বিশ্বজুড়ে কয়েক হাজার সরকারি কর্মী, সাংবাদিক, বড় রাজনীতিবিদের ফোনে আড়িপাতারও অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি ৫০ হাজারের বেশি ফোন নম্বরের একটি তালিকা ফাঁস হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৬ সাল থেকে এনএসওর গ্রাহকরা এসব নম্বরে আড়ি পেতেছিল।
এদিকে ইসরাইলের কুখ্যাত পেগাসাস স্পাইওয়্যারের হ্যাকের শিকার হয়েছেন জর্ডানের বহু সাংবাদিক, আইনজীজী ও মানবাধিকারকর্মী। গোয়েন্দা অ্যাপসটি ব্যবহার করে তাদের মোবাইল ফোন হ্যাক করে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর তথ্য-উপাত্ত হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জর্ডানে সাংবাদিক, আইনজীবী ও অ্যাক্টিভিস্টসহ ৩০ জনেরও বেশি গুরুত্ব ব্যক্তির মোবাইল ফোন হ্যাক করা হয়েছে। এতে বেশ কয়েক বছর ধরে আলোচিত ইসরাইলের তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে। বিষয়টি এক তদন্তে উঠে এসেছে। মানবাধিকার বিষয়ক অলাভজনক সংস্থা ‘অ্যাকসেস নাও’, মানবাধিকার সংস্থা ‘সিটিজেন ল্যাব’ ও আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান যৌথভোবে তদন্তটি চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে এমন ৩৫টি জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কেস স্টাডি করা হয়েছে যা পেগাসাস ম্যালওয়্যারের হ্যাকের শিকার হয়েছেন। হ্যাকের বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটেছে ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে ‘অ্যাক্সেস নাও’ বলেছে, আমরা মনে করি, তদন্তে যে কয়েকটি উঠে এসেছে, তা একটি মামুলি অংশমাত্র। হ্যাক বা নজরদারির শিকার হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা সম্ভবত আরও অনেক বেশি।’ যদিও তদন্ত প্রতিবেদনে স্পাইওয়্যার ব্যবহারের ব্যাপারে জর্ডানের সরকারকে অভিযোগ করা হয়নি। তবে এটা এমন ইঙ্গিত দেয় যে, জর্ডানে স্পাইওয়্যারের ব্যবহার ‘নাগরিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমিতি ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার’র ওপর দমনপীড়নের সাথে সম্পৃক্ত। এই প্রতিবেদনের ব্যাপারে জর্ডান সরকার কোনো মন্তব্য করেনি বলে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, মার্কিন আদালতের রায় সামনে আসার পরই ভারতেও ফের পেগাসাস নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। ভারতে পেগাসাস বিতর্কের অধ্যায় স্মৃতিতে এখনও টাটকা। একাধিক সরকারি আধিকারিক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতানেত্রী, মানবাধিকার কর্মীদের ফোনে পেগাসাস জানার খবরে ভারতের পাশাপাশি সারা বিশ্বে আলোড়ন পড়েছিল। ২০২৫ সালে পেগাসাস হানার খবরে মোদি সরকারের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়েছিল। যদিও মোদি সরকার সেই সমস্ত অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছিল। পেগাসাস স্পাইওয়ারের মাধ্যমে এ দেশের প্রায় ৩০০ জনের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। আদালতের রায় প্রকাশ্যে আসতেই ফের সরব হয়েছে কংগ্রেস। কাদের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল, মেটা কর্তৃপক্ষকে সেই নামের তালিকা প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা। মোদি সরকারকে তোপ দেগে সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, কোন ৩০০ ভারতীয়ের ফোনকে নিশানা করা হয়েছিল? তালিকায় কোন বিরোধী নেতারা রয়েছেন? কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাই বা কারা রয়েছেন আড়ি পাতার তালিকায়? তা প্রকাশ করা হোক।