নিজস্ব সংবাদদাতা, জলঙ্গি: শীতের মরসুম। উত্তরে হাওয়া আর মিঠেল রোদ। সঙ্গে খোলা জায়গায় গৃহিণীদের বড়ি তৈরির ব্যস্ততা। সেই সুদূরের কাল থেকে বর্তমানের ডিজিটাল জমানা, বড়ি তৈরির এই ছবির বদল ঘটেনি আজও। বছরের পর বছর ধরে এভাবেই শীত নামতেই কার্যত বড়ি তৈরির উৎসবে মেতে ওঠে বড়ির মা-বোন-দিদিমারা। তবে অন্যান্যবার নির্ভিগ্নে বড়ি দিতে পারলেও এবারে দু’বার ভাবতে হচ্ছে তাঁদের। কারণ, বড়ি তৈরির ভরা মরসুমে এবারে মহার্ঘ্য পাকা চাল কুমড়ো। কোথাও ২৫, কোথাও আবার ৩০ টাকা প্রতি কেজি দরে পাকা চাল কুমড়ো বিক্রি হচ্ছে খোলা বাজারে। কোথাও কোথাও আবার বেশি দাম দিয়েও মিলছে পাকা চাল কুমড়ো। আর তাতেই বিপাকে পড়েছেন বড়ির গৃহিণীরা।
ভোজনরসিক বাঙালির খাদ্য তালিকায় বারবারই আলাদা জায়গা রয়েছে বড়ির। বিভিন্ন রকমের বড়ি থাকলেও এই সময়ে সবথেকে বেশি কলাইয়ের বড়ি তৈরিতে ধুম দেখা যায়। বড়ি তৈরির মূল উপকরণের একটি কলাই হলেও অপরটি হল পাকা চাল কুমড়ো।বেশিরভাগ পরিবারের জমিতে কলাই থাকায় কলাই নিয়ে সমস্যায় না পড়লেও বড়ি তৈরিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পাকা চাল কুমড়োর দাম। এক সময়ে যে চাল কুমড়ো প্রতিপিস ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এই বছরে সেই কুমড়োই ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে শুরু হয়েছে। তাতে এক একটি পিসের দাম পড়ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। দাম ভালো থাকায় কোথাও কোথাও টোটোয় মাইক বেঁধে প্রতিকেজি ৩৫ টাকা দরেও পাকা চাল কুমড়ো বিক্রি চলছে। আর এতেই সমস্যায় পড়েছেন মহিলারা।
জলঙ্গির সুফিয়া খাতুন নামের এক বধূ বলেন, আগে বড়ি দেওয়ার পর তা সংরক্ষণ করার পাশপাশি তা শহরের আত্মীয়দের বড়ি পাঠাতাম। তবে এবার চাল কুমড়োর যা দাম তাতে বড়ি দেওয়ার কথা ভাবতেই ভয় লাগছে। এক একটি চাল কুমড়ো ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি করছে। কিন্তু কেন চাল কুমড়োর এত দাম? বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে যা জানা গেল তাতে, ছোটো অবস্থাতেই অনেকেই সব্জি হিসেবে চাল কুমড়ো বিক্রি করে দেন।
এছাড়াও বরফি, মোরব্বা তৈরির জন্য পাইকররা ওই চাল কুমড়ো কিনে তা বাইরের ফ্যাক্টরিটে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। আর এই সব কারণেই বড়ির মরসুমে নাকাল চাল কুমড়ো। রানিনগরের এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, ফ্যাক্টরিতে পাঠানোর জন্য বাজারে চাল কুমড়োর যা দাম তার থেকে কিছুটা বেশি দরেই আমাদের কিনতে হচ্ছে। যদিও তাতে আমাদের খুব একটা লস হচ্ছে না। কারণ আমাদের কাছে থেকে চড়া দরেই মোরব্বা, বরফি তৈরির কোম্পানিগুলি চাল কুমড়ো কিনে নিচ্ছে।