নিজস্ব সংবাদদাতা, রানিনগর: ব্যর্থ হল উস্কানি। মুর্শিদাবাদের রানিনগরের শেখপাড়া বাজার শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধ রাখার পুনঃপ্রচার নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা করেন এক ইউটিউবার। রীতিমতো গুজব ছড়িয়ে উস্কানিতেই মদদ দিয়েছেন ওই ইউটিউবার। যদিও সেই ‘পা’ দিল না রানিনগরের সচেতন নাগরিকরা। জানা গিয়েছে, টোটোয় মাইক বেধে সাপ্তাহিক বাজার বন্ধ রাখা নিয়ে পুনঃপ্রচার করে বাজার কমিটি। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুক্রবার বাজার বন্ধ রাখার প্রচারকে তালিবানি ফতোয়া বলে মন্তব্য করেছেন। শুধু তাই নয়, রাজ্যের শাসকদলের ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি। প্রচার নিয়ে তৎপর হয়েছে বেশ কিছু বৈদ্যুতিন মাধ্যমও। কিন্তু ওই সন্দেহ প্রকাশের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির কোনও মিল নেই বলেই মনে করেন রানিনগরের একাংশ। সেই অর্থে ওই রাজনৈতিক বিশ্লেষণ পাগলের প্রলাপ বলেও দাবি করছেন এলাকার মানুষ। তাদের দাবি, ওই ইউটিউবারের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ সম্পূর্ণ গুজবে পরিণত হয়েছে। ঠিক কি হয়েছিল! ওই বাজারের প্রাক্তন সম্পাদক সইদুল ইসলাম মন্টু জানান, “যেটাকে তালিবানি ফতোয়া বলা হচ্ছে, সেটা আসলে ১৯৯২ সাল থেকে চালু আছে শেখপাড়া বাজারে। মানে তখনই তৈরী হয়েছিল শেখপাড়া বাজার কমিটি। আর তখন থেকেই শুক্রবার সাপ্তাহিক বাজার বন্ধের দিন চলে আসছে।”
মন্টুর কথায়, ১২ ডিসেম্বর রানিনগর থানার শেখপাড়া বাজার কমিটি ফের তাদের প্রচারে নির্দিষ্ট কিছু দোকান ব্যতিরেকে সমস্ত দোকান পূর্ণ দিবস বন্ধ রাখার ঘোষনা করেছে মাত্র। যারা ফতোয়া মনে করছেন তারা বন্ধের দিন শুক্রবার হওয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন, কারণ ওইদিন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ জুম্মাবারে মসজিদে নামাজ পড়তে যান বলে। ওই কথায় যাওয়ার আগে শেখপাড়া বাজার এর আশেপাশের সাপ্তাহিক বাজার বন্ধের একটা পরিসংখ্যান জেনে নেওয়া যাক। পাশেই রানিনগর বাজার, যার ৯৭ শতাংশ ব্যাবসায়ী মুসলমান সম্প্রদায়ের, মাত্র ৩ শতাংশ ব্যাবসায়ী হিন্দু সম্প্রদায়ের। ওই ফতোয়ার কথা ভাবলে বলতে হয় তা হলে কি রানিনগরের ৯৭ শতাংশ মুসলিম দোকানদারকে লক্ষীবারে লক্ষী পুজো করতে বাধ্য করেছে ওই বাজার কমিটি! তা যদি না হয়! তবে শেখ পাড়ার বেলায় অন্যথা ভাবা হচ্ছে কেন! কেবলমাত্র বারটা শুক্রবার বলে? জলঙ্গি বাজার সোমবার বন্ধ থাকে। সেখানেও মুসলিম ব্যাবসায়ীদের সংখ্যা বেশী। তাহলে কি সেদিন মুসলিমরা শিবের পুজো করেন? নিশ্চয় তা নয়। এরকম আরও অনেক বাজারের উদাহরণ আছে, দেওয়া যায়।
তাছাড়া শেখপাড়া বাজারে যেদিন থেকে মানে সেই ১৯৯২ সালে যখন থেকে কমিটি গঠন হয়েছে সেই তখন থেকে শুক্রবার দিনটি সাপ্তাহিক বাজার বন্ধের দিন ধার্য্য হয়ে আসছে। বলা যায় তখন থেকেই ওই নিয়ম চলে আসছে। প্রশ্ন উঠতে পারেন তা হলে সেদিন নতুন করে মাইকিং করা হল কেন শুক্রবার বন্ধের জন্য? তার উত্তরটা এরকম। পশ্চিমবঙ্গে সম্ভবত এই নিয়ম সব বাজারে চালু আছে। সেটা হল যে কোনও উৎসবের আগে সেটা দুর্গাপুজো হোক, বা কালীপুজো হোক বা ইদ, রোজার মাস বা অন্যান্য উৎসব তার ১৫ দিন আগে থেকে ও উৎসবের ১৫ দিন পরে পর্যন্ত বাজার সবদিন খোলা থাকে। এই পরিস্থিতিতে ১২ ডিসেম্বর মাইকিং করে বাজার আগের মতোই বন্ধ রাখার কথা ঘোষনা করা হয়েছে। সেটা মানুষের মধ্যে জানান দেওয়ার জন্যই। সেই প্রচারের একটি ক্লিপ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করে একটি পোর্টাল প্রচার করেছে। আর তা নিয়েই শুরু হয় জল ঘোলা। কিছু বিশ্লেষক রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে তালিবানী ফতোয়া বলে প্রচার করছে। যা মোকাবিলা করতে পুলিশ প্রশাসনকে মাঠে নামতে হয়। আদাজল খেয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করে প্রশাসন। যদিও স্থানীয় মানুষের মধ্যে কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি ওই উস্কানি।