নয়াদিল্লি: ২০০৫ সালে তৈরি হয় তথ্য জানার অধিকার (আরটিআই) আইন। বর্তমানে আরটিআই আইনকে কার্যত বন্ধ করতে চাইছে সরকার। যে কারণেই দীর্ঘ সময় ধরে তথ্য কমিশনের বহু শূন্যপদে কমিশনার নিয়োগ করা হচ্ছে না। বহু রাজ্যেও কমিশনার নিয়োগ না হওয়ায় তা অচল হয়ে পড়ে আছে। কমিশনে বহু শূন্যপদ পড়ে থাকায় আরটিআই আইনে প্রশ্ন করেও তার জবাব মিলছে না সরকারের তরফে। জবাবহীন বকেয়া প্রশ্নের পাহাড় জমেছে রাজ্যে রাজ্যে। ২০১৯ সাল থেকে নাগরিকদের তথ্য জানার অধিকার আইন সুষ্ঠুভাবে কার্যকর করতে কমিশনের শূন্যপদে নিয়োগে আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্ট মামলা হয়। আদালত কেন্দ্র এবং রাজ্যকে কমিশনের শূন্যপদে নিয়োগের নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি। বছরের পর বছর শূন্যপদ বেড়েই চলেছে। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং কে কোর্টেন্সর সিংয়ের বেঞ্চে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয়। এদিন কার্যত কেন্দ্রকে ভর্ৎসনা করে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট সাফ বলেছে, যদি তথ্য কমিশনের পদ শূন্য পড়ে থাকে, নিয়োগ করার মতো লোক না থাকে তবে এই প্রতিষ্ঠানের দরকার কি? এদিন মামলার শুনানিতে কমিশনে নিয়োগের এই চরম গাফিলতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি জানান, শূন্যপদের জেরে তথ্য কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানের যদি কাজ না হয়, তবে তো তথ্য জানার অধিকার আইনটাই অচল হয়ে যাবে। মামলাকারীর আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ জানান, ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট কমিশনের সমস্ত শুন্যপদে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিল। পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হলেও আজও নির্দেশ মতো সেই নিয়োগ হয়নি। বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং কে কোর্টেন্সর সিংয়ের বেঞ্চ এদিন কেন্দ্রকে তথ্য কমিশনে কমিশনার পদে নিয়োগে কারা আবেদন জানিয়েছেন, তাঁদের যোগ্যতা কী রাখা হয়েছে, তার সব তথ্য দু’সপ্তাহের মধ্যে আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি সমস্ত রাজ্য সরকারকে তাদের তথ্য কমিশনের কত শূন্য পদ রয়েছে তাতে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে কত জন তাতে আবেদন জানিয়েছেন, তাঁদের কী যোগ্যতা রাখা হয়েছে, নিয়োগের বাছাই কমিটিতে কারা রয়েছেন- তার তালিকা এক সপ্তাহের মধ্যে কোর্টে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে। এনিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মুখ সচিবদের নোটিশ পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোট।
এদিকে ইউপিএ আমলে আরটিআই আইন তৈরি হলেও কেন্দ্রে ক্ষমতা বদলের পর মোদি সরকারের আমলে নানা ভাবে এই আইন খর্ব করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ মানবাধিকার কর্মীদের। ন্যাশনাল ক্যাম্পেন ফর পিপলস রাইট ইনফরমেশন (এনসিপিআরআই) বলেছে, কমিশনে শূন্য পদ থাকায় কাজ হচ্ছে না। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনে ১০ কমিশনার পদের মধ্যে ৮টি কমিশনার পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। তাতে নিয়োগ হচ্ছে না। মাত্র দুইজন কমিশনার দিয়ে কাজ চলছে। এতে কেন্দ্রীয় কমিশনে ফয়সালা না হওয়া বকেয়ার প্রশ্নের সংখ্যা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বেড়ে হয়েছে ২৩ হাজার। কমিশনে ফয়সালা না হওয়ায় সবমিলিয়ে বকেয়া প্রশ্নের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.১৫ লক্ষ। এনসিপিআরআই আর জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি, বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি এবং সমস্ত রাজ্য সরকারকে কমিশনের শুন্যপদে নিয়োগের দাবি জানিয়ে গত বছর চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবুও কেন্দ্র বা রাজ্য কারও তরফে কমিশনের নিয়োগের কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না।