ওয়াশিংটন: গুয়ানতানামো বেতে ডিটেনশন ক্যাম্প (অভিবাসী আটক কেন্দ্র) নির্মাণের নির্দেশ দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। উদ্দেশ্য আমেরিকায় বসবাসকারী হাজারো অবৈধ বা অনিবন্ধিত অভিবাসীকে কিউবার গুয়ান্তানামো বে এলাকার বন্দিশালায় আটকে রাখা। একসঙ্গে ৩০ হাজার মানুষকে যাতে আটকে রাখা যায়, তেমনই ডিটেনশন ক্যাম্প নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, কিউবায় অবস্থিত মার্কিন নৌবাহিনীর এ স্থাপনা সেখানকার উচ্চ নিরাপত্তাযুক্ত সামরিক কারাগার থেকে আলাদা হবে। এই আটক কেন্দ্রে মার্কিন জনগণকে হুমকি দেওয়া সবচেয়ে খারাপ অপরাধী অবৈধ অভিবাসীদের রাখা হবে।
২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন মসনদে বসেছেন ট্রাম্প। অভিষেক অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণেই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি। ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ বন্ধ করে দেবেন তিনি। অবৈধ অভিবাসীরা ‘অপরাধী’। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এমন লাখো অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হবে। একইসঙ্গে ট্রাম্প জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান নিয়মকানুনে পরিবর্তন আনার কথাও জানান নয়া প্রেসিডেন্ট।
এদিন হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমে একটি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, আমাদের গুয়ানতানামোতে ৩০ হাজার মানুষ রাখার ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে আমেরিকান জনগণের জন্য হুমকিস্বরূপ সবচেয়ে বিপজ্জনক অপরাধী অবৈধ অভিবাসীদের আটক রাখা হবে। তাদের মধ্যে ভয়ঙ্কর কিছু মানুষ আছে, তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকি নিতে চাই না আমরা। তাই তাদের গুয়ানতানামোতে পাঠাব। এটি আমাদের আটক রাখার সক্ষমতা দ্বিগুণ করবে এবং এটি এমন একটি জায়গা হবে যেখান থেকে বের হওয়া অত্যন্ত কঠিন।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারসহ কয়েকটি স্থাপনায় হামলার প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে দেশটি। এর আওতায় আফগানিস্তান, ইরাক ও আরও কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে সেনা অভিযান চালায় তারা। অভিযানে আটক হওয়া ব্যক্তিদের ধরে এনে কুখ্যাত গুয়ান্তানামো বে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়। এ কারাগারে এখনো ১৫ জন বন্দী রয়েছেন। একসময় কারাগারটিতে একসঙ্গে সর্বোচ্চ প্রায় ৮০০ জনকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। এছাড়াও গুয়ান্তানামো বে কারাগার ৯/১১ হামলার পর থেকে সন্দেহভাজন ‘সন্ত্রাসীদের’ বন্দী করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভয়াবহ নির্যাতনের অভিযোগ এনে বেশ কিছু মানবাধিকার সংস্থা এসব আটক কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনাও করেছে।
অবৈধ অভিবাসীদের গুয়ান্তানামো বেতে বন্দী করে রাখা নিয়ে ট্রাম্পের ঘোষিত পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হওয়া অভিবাসীবিরোধী অভিযান আরও জোরদার হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে কিউবার সরকার এই পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে এবং ‘দখলকৃত’ জমিতে নির্যাতন ও অবৈধ আটকের অভিযোগ এনেছে।
২০২৪ সালে ইন্টারন্যাশনাল রিফিউজি অ্যাসিসটেন্স প্রজেক্ট (আইআরএপি)এক প্রতিবেদনে বলেছিল, অভিবাসীদের ‘অমানবিক’ অবস্থায় অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখছে আমেরিকা। গুয়ানতানামো বে কারাগার মূলত সমুদ্রে আটক অভিবাসীদের রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। এটি সন্ত্রাসবাদীদের আটক রাখার জন্য কুখ্যাত, যেখানে বন্দিদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে। বাইডেন প্রশাসন এই কেন্দ্র বন্ধ করতে চেয়েছিল। গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্ক টাইমস রিপোর্ট করেছিল যে গুয়ানতানামো বেতে একটি পৃথক অভিবাসী আটক কেন্দ্রও রয়েছে।