নয়াদিল্লি: মার্কিন মসনদে বসেই অবৈধ অভিবাসীদের খাদাতে শুরু করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতিমধ্যে এক দফায় ১০৪ জন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এবার দ্বিতীয় দফায় ফের ভারতীদের ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু করেছে আমেরিকা। সূত্রের খবর, দ্বিতীয় দফায় ৪৮৭ জন অবৈধ অভিবাসীকে ভারতে ফেরত পাঠাতে চূড়ান্ত নির্দেশিকা জারি করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভারতের বিদেশমন্ত্রক। এদিন বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে ৪৮৭ জন ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন, তাদের ফেরত পাঠাতে চূড়ান্ত নির্দেশিকা জারি করেছে। বিদেশ সচিবের কথায়, “আমাদের বলা হয়েছে যে ৪৮৭ জন সন্দেহভাজন ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন, যাদের চূড়ান্ত অপসারণের আদেশ রয়েছে।” বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, “মার্কিন বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে তাদের আইনি অবস্থান এবং মর্যাদা সম্পর্কে আমাদের কাছে সংশ্লিষ্ট অভিবাসীদের সংখ্যা সম্পর্কে কিছু তথ্য আছে। আমরা সেগুলি নিয়ে কাজ করছি।”
প্রথম দফায় ফেরত
দ্বিতীয়বারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে ফেরার পর থেকেই ‘অবৈধ অভিবাসন’ এবং অনুপ্রবেশের মতো ইস্যু নিয়ে রণংদেহী মূর্তি ধারণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই আবহে ক’দিন আগেই কলম্বিয়া সহ বেশ কিছু দেশে ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ ফিরিয়ে দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অবৈধ অভিবাসীদের ভারতে ফেরাত পাঠিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন সেনাবাহিনীর বিমান সি-১৭ করে ১০৪ জন ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ, ভারতীয়দের পায়ে শিকল ও হাতে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে আসা হয়। অভিবাসীদের বহনকারী মার্কিন সামরিক বিমান অমৃতসরে অবতরণ করে। এই ঘটনার ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে।
বিরোধীদের অভিযোগ
বৃহস্পতিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) আমেরিকা থেকে ভারতীয় অভিবাসীদের বিতাড়ন ইস্যুতে উত্তাল হয়ে ওঠে সংসদ। বারেবারে মুলতুবি হয়ে যায় অধিবেশন। লোকসভায় কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা অভিযোগ করে, “ভারতীয়দের চরম অপমান করা হয়েছে।” ভারতীয়দের পায়ে শিকল ও হাতে হাতকড়া পরানো নিয়ে বিরোধিরা বলেন, ‘এই ঘটনা সম্পূর্ণভাবে অমানবিক। তাদের হাতে হাতকড়ি, পায়ে শিকল পরানো ছিল। যা সমস্ত ভারতীয়দের জন্য অপমানজনক একটি ঘটনা। আর এরপরেও চুপ রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’
মোদির ‘বন্ধু’ ট্রাম্পের অভিবাসীদের প্রত্যাপর্ণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংসদ চত্বরে বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেস। সাংসদ শশী থারুর বলেন, “এভাবে কোনওদিন ভারতীয়দের ফেরানো হয়নি। আমাদের নাগরিকদের হাতকড়া পরানো চরম অপমান।”
অভিবাসীদের নিয়ে বিদেশমন্ত্রী
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিরোধীদের অভিযোগ নিয়ে মুখ খোলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। তিনি বলেন, “আমেরিকা থেকে প্রত্যর্পণ নতুন কিছু নয়। ২০০৯ থেকে হচ্ছে। কোনও দেশের নাগরিক যদি বেআইনিভাবে অন্যত্র বসবাস করেন সেক্ষেত্রে তাঁদের ফিরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট দেশ বাধ্য।” এদিন সংসদে কংগ্রেস সাংসদ রণদীপ সুরজেওয়ালা প্রশ্ন করেন, “সরকার কি জানত ১০৪ জন ভারতীয়কে হাতে হাতকড়া পায়ে শিকল পরিয়ে ৪০ ঘণ্টা বিমানে বসিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে? জঙ্গিদের মতো করে এভাবে কি তাঁদের ফেরানোর কথা সরকার জানে?” উত্তরে বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, “হাতকড়া পরিয়ে তোলা আমেরিকার নিয়ম। কিন্তু মহিলা ও শিশুদের হাতকড়া পরানো হয়নি। বাকিদেরও শৌচাগারে যাওয়ার সময় হাতকড়া খুলে নেওয়াও হয়েছে।” জয়শংকর আরও বলেন, ‘এই অভিবাসীদের সঙ্গে যাতে কোনও দুর্ব্যবহার করা না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য আমেরিকার প্রশাসনের সঙ্গে কেন্দ্র নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।’