কর্তব্যে গাফিলতি: গোটা অফিসকে দাঁড় করিয়ে শাস্তি

শেয়ার করুন

নয়ড়া: দেশের বিভিন্ন সরকারি অফিসে একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মীর মধ্যে ফাঁকিবাজি নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের সরকারি বিভিন্ন অফিসে কর্মচারীদের দ্বারা সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করা যেন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন জেলা-মহকুমা ও ব্লক স্তরের সরকারি অফিসে কর্তব্যরতদের খুঁজে পাওয়া দায়। আবার একশ্রেণির কর্মীরা দেরিতে অফিসে এলেও কর্মকর্তা-কর্মীরা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঊর্ধ্বতন কর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে অফিস শেষ হওয়ার আগেই বাড়ি চলে যান। ফলে সরকারি দপ্তরের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে। হেনস্থা শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফাঁকি দেওয়ার কারণে দূর-দূরান্ত থেকে কাজে আসা মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এমনই এক দুর্ভোগের শিকার হন এক বৃদ্ধ। তা নজরে আসতেই অফিস কর্মীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিলেন এক আইএএস আধিকারিক। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশের নয়ডা কর্তৃপক্ষের অফিস কাউন্টারের সামনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন এক বৃদ্ধ। ঘটনাটি নজরে আসে নয়ড়া কর্তৃপক্ষের সিইও ডঃ লোকেশ এমের। অকারণে বৃদ্ধকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করানোর দায়ে কর্মীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন ওই আইএএস অফিসার। কর্তব্যে ও পরিষেবা প্রদানে গাফিলতির কারণে ১৬ জন কর্মীকে দাঁড়িয়ে করিয়ে রাখেন তিনি। এমনকি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের কাজ এবং দায়িত্ব পালন করানো হয়। জানা গিয়েছে, সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ ও অকারণে অপেক্ষা করানোর কষ্ট কতটা! তা বোঝাতেই এধরণের শাস্তি দেওয়া হয় কর্মীদের। সাধারণ মানুষকে সঠিক ভাবে পরিষেবা দেওয়াই সরকারি কর্মীদের কাজ, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন ডঃ লোকেশ। কর্মীদের অভিনব শাস্তির দিয়ে দেশজুড়ে প্রশংসা পেয়েছেন ২০০৫ ব্যাচের ওই আইএএস।

উন্নত পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নয়ড়া কর্তৃপক্ষ। পরিষেবা প্রদানে গাফিলতি ও অনীহা নিয়ে নজরদারি চালাতে অফিসে ৬৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছিলেন নয়ড়া কর্তৃপক্ষ সিইও আইএএস অফিসার ডঃ লোকেশ এম। তাতে দেখা যায়, অফিসের সার্ভিস কাউন্টারে এক বৃদ্ধ অপেক্ষা করছেন। তারপরই কন্ট্রোল রুম থেকে কর্মীদের বলা হয়, ওই বৃদ্ধ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তার সমস্যাটি শুনে দ্রুত সমাধান করতে বলা হয়। যদি তার সমস্যা সমাধান সম্ভব না হয় তবে বৃদ্ধকে স্পষ্টভাবে কারণ বুঝিয়ে বলতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সিইও-র স্পষ্ট নির্দেশ সত্ত্বেও বৃদ্ধকে ২০ মিনিট দাঁড় করিয়েই রাখা হয়। কার্যত সিইও নির্দেশের তোয়াক্কা করেননি কর্তব্যরত কর্মীরা। তারপরই অফিসে যান ডঃ লোকেশ। কর্তব্যে গাফিলতি অভিযোগে মহিলাসহ ১৬ জন কর্মীকে ২০ মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখেন তিনি। এমনকি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ২০ মিনিট কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন আইএএস অফিসার। তার এই পদক্ষেপ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোড়ন পড়েছে। নেটিজেনরা আইএএস অফিসারের পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছে। এক নেটিজেন বলেছে, যাদের করের টাকায় সরকারি কর্মীরা বেতন পান, ঘুরিয়ে তাদেরই হেনস্থা করা হবে। এসব একদমই বরদাস্ত করা যাবে না। মানুষকে সঠিকভাবে পরিষেবা দেওয়া এবং সরকারি কর্মীদের ফাঁকিবাজি রুখতে এটি সাহসী পদক্ষেপ। সরকারী অফিসগুলিতে হেনস্থা ও দুর্ভোগ বন্ধ করতে আরও কঠোর হতে হবে প্রশাসনকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *