নিউইয়র্ক, ২৮ ডিসেম্বর: বিশ্বব্যাপী প্রতি ৬ জন শিশুর মধ্যে ১ জন শিশু এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বা সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে বসবাস করছে। প্রায় ৪৭৩ মিলিয়ন শিশু যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে জীবনযাপন করছে। এমনই এক উদ্বেগজনক রিপোর্ট প্রকাশ করল ইউনিসেফ। শনিবার প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪৭৩ মিলিয়ন শিশু সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে বসবাস করছে। এই সংখ্যা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। সংঘাতের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে শিশুদের জীবন কঠিন হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে গাজা, সুদান এবং ইউক্রেনে। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেছেন, “২০২৪ সাল এখন পর্যন্ত শিশুদের জন্য সবচেয়ে খারাপ বছরগুলির মধ্যে একটি, যেখানে সংঘাতের কারণে তাদের জীবন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” ইউনিসেফ কর্তার কথায়, যুদ্ধবিদ্ধস্ত অঞ্চলে জন্ম নেওয়া একটি শিশু প্রায়ই স্কুলে যেতে পারে না। অপুষ্টিতে ভোগে এবং বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
২০২৩ সাল থেকে লাগাতার গাজায় ইসরাইলি হামলার ফলে ফিলিস্তিনি শিশুদের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। ১৫ মাসের দীর্ঘ সংঘাতে গাজার ১৭,৪৯২টি শিশু নিহত হয়েছে, যা এক ভয়াবহ পরিসংখ্যান। ইউনিসেফ জানায়, প্রায় ৪৭.২ মিলিয়ন শিশু বিশ্বব্যাপী সংঘাত ও সহিংসতার কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা আরো বাড়বে। রাষ্ট্রসংঘের শিশু তহবিল সংস্থা ইউনিসেফের রিপোর্ট বলছে, ২০২৩ সালে শিশুদের বিরুদ্ধে ৩২,৯৯০টি গুরুতর লঙ্ঘন ঘটেছে, যা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে শিশুদের হত্যা, নির্যাতন, এবং শিক্ষার অধিকার হরণ করা হয়েছে। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউনিসেফের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, “বিশ্ব এই শিশুদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে। আমাদের ২০২৫ সালের দিকে আরও উদ্যোগ নিতে হবে যাতে আমরা তাদের জীবন রক্ষা করতে পারি।”
এদিকে লাগাতার ইসরাইলি হামলায় গাজার শিশুদের অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। যেখানে খাদ্য ও পোশাকের অভাব, রোগ এবং প্রচণ্ড শীত তাদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। ইউএন-এর শিশু তহবিল সংস্থা জানায়, গাজার ৯৬% নারী ও শিশু তাদের মৌলিক পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারছে না এবং সাহায্য পৌঁছাতে অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এছাড়া, শিশুদের মধ্যে যৌন সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের শিক্ষায় বাধা সৃষ্টি হয়েছে এবং মানসিক স্বাস্থ্যেও মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। এই পরিস্থিতি সামলাতে রাষ্ট্রসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থাগুলিকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।