নিউইয়র্ক: আমেরিকায় রহস্যমৃত্যু হয় ভারতীয় বংশোদ্ভূত এআই গবেষক সুচির বালাজির। ২৬ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ফ্রান্সিস্কোর বুচানন স্ট্রিট এলাকার এক ফ্ল্যাট থেকে ছাব্বিশ বছর বয়সী এআই গবেষকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি চ্যাটজিপিটির স্রষ্টা সংস্থা ওপেনএআই-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে ওই সংস্থা থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর সংস্থার বিরুদ্ধে একাধিক বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ্যে এনেছিলেন। সেই ঘটনার পরই তার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। আত্মহত্যা নাকি খুন! তা একাধিক প্রশ্ন উঠেছিল। যদিও ক্যালিফোর্নিয়ার পুলিশ জানিয়েছিল, বালাজির মৃত্যু ছিল একটি আত্মহত্যা।
এবার এআই গবেষক মৃত্যু নিয়ে মুখ খুললেন বালাজির পরিবার। সে আত্মহত্যা করেনি, তাকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করলেন তার বাবা-মা। গবেষকের মা পূর্ণিমা রাও অভিযোগ করেন, “তাঁদের ছেলে আত্মহত্যা করেনি। তাকে ঠান্ডা মাথার খুন করা হয়েছে।” এদিকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইকে দিয়ে ছেলের খুনের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন গবেষকের বাবা-মা।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওপেন এআই বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি। বর্তমান বিশ্বে ব্যাপকভাবে পরিচিত এবং জনপ্রিয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাট জিপিটি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক সুচির বালাজি ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ওপেন এআইয়ের কর্মী ছিলেন। গত আগস্টে মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওপেন এআইয়ের বিরুদ্ধে রীতিমতো বিস্ফোরণ তথ্য প্রকাশ করে বালাজি। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আপনি যদি ওপেন এআইয়ের কর্মী হতেন, তাহলে আমি যা জানি, তা জানার পর নিশ্চিতভাবেই আপনি সেই কোম্পানি ত্যাগ করতেন। তারা যেভাবে ব্যবসা করছে, সেটি কোনোভাবেই ইন্টারনেট ইকোসিস্টেমের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।” ওপেনএআইয়ের কাজের পদ্ধতি নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন সুচির। তবে তাঁর অভিযোগগুলি মানতে চায়নি সংস্থা। ওপেনএআই বিবৃতি দিয়ে বলেছিল, “ইন্টারনেটে সর্বসাধারণের জন্য যে সমস্ত তথ্য মেলে, আমরা সেগুলি ব্যবহার করেই আমাদের এআই মডেল তৈরি করে থাকি। আইন সমর্থিত পদ্ধতিতেই আমরা কাজ করি। আমরা মনে করি, আমাদের এই নীতি নির্মাতাদের জন্য ন্যায্য, উদ্ভাবকদের জন্য প্রয়োজনীয় এবং আমেরিকার বাজারে প্রতিযোগিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।” সংস্থার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ্যে আনার তিন মাস পর রহস্যমৃত্যু হয় সুচির বালাজির। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, গত ২৬ নভেম্বর বালাজির মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে এতদিন তা গোপন রাখা হয়েছিল। কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে— সে সম্পর্কিত কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি পুলিশ। সান ফ্রান্সিসকো পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, সংবাদমাধ্যমে জানানোর মতো কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত তাদের হাতে নেই।
এদিকে বালাজির পরিবার জানায়, মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় খোশ মেজাজে ছিলেন বালাজি। সম্প্রতি বন্ধুদের সঙ্গে ছুটি কাটিয়ে ফিরেছিলেন তিনি। বালাজি যে আত্মহত্যা করেছে তা কোনও ভাবেই মানতে পারছে না তার পরিবার। গবেষক মা জানিয়েছেন, ২৯ ডিসেম্বর একটি বেসরকারি তদন্তকারী সংস্থা নিয়োগ করা হয়েছে। এক বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে তার দেহের দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। পূর্ণিমা রাও বলেন, “বেসরকারি সংস্থার ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কারণ হিসাবে আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।” বালাজির মায়ের অভিযোগ, ছেলে যে অ্যাপার্টমেন্টটিতে থাকত সেই ঘর তছনছ করা হয়েছিল। বাথরুমে রক্তের দাগ দেখা গিয়েছে। বাথরুমে তাকে কেউ আঘাত করেছে। তার শরীরে ক্ষতের চিহ্ন ছিল। বালাজির একটি পেনড্রাইভ খুজে পাওয়া যাচ্ছে না, সেটি নিখোঁজ রয়েছে।
Suchir Balaji parents adter a walkthrough of his apartment. pic.twitter.com/DfD4bnsCzo
— George Webb – Investigative Journalist (@RealGeorgeWebb1) December 31, 2024
প্রসঙ্গত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার উস্কে দেওয়ার অভিযোগে ২০২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ওপেন এআইয়ের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। সুচির বালাজির স্বীকারোক্তি সেসব মামলার বিচারকাজে নতুন গতি যোগ করেছিল। সামাজিক মাধ্যমে সর্বশেষ এক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, বিভিন্নভাবে চ্যাট জিপিটিরও অপব্যবহার হচ্ছে, যা অদূর ভবিষ্যতে এই খাতের বাণিজ্যকে ঝুঁকিতে ফেলবে। এদিকে পুলিশ সুচিরের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বললেও তা মানতে নারাজ অনেকেই। কেন মরতে হল সুচিরকে? তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। এই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন মার্কিন ধনকুবের এলন মাস্ক। বালাজির মৃত্যু নিয়ে তিনি এক্স বার্তায় লিখেছেন, “এটি আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে না।”