নিজস্ব সংবাদদাতা, ডোমকল: ডোমকলের জিতপুর সংরক্ষিত বনাঞ্চল। খাতায় কলমে ‘সংরক্ষিত’ ট্যাগ থাকলেও কাঠমাফিয়াদের দৌরাত্বে সেই কবেই হাঁফিস হয়ে গিয়েছে বড় বড় গাছগুলি। তবে যে গাছগুলি এখনও গাছ বেঁচে আছে, পিকনিকের মরসুমে সেগুলি নিয়েও বাড়ছে বিপদ। কারণ সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই সংরক্ষিত বনাঞ্চলের নীচে চলছে আগুন জ্বেলে চলছে দেদার বনভোজন। রীতিমতো বক্স বাজিয়ে ডিজের তালে চলছে পিকনিক। পাতাঝরার মরসুমে রান্নার গ্যাস জ্বালিয়ে বনাঞ্চলে পিকনিক করায় বাড়ছে যে কোনও সময় আগুন লেগে যাওয়ার শঙ্কা। পাশাপাশি দিনভর শব্দদানব তাণ্ডব চালালেও বন দপ্তরের উদাসীনতার ছবি উঠে আসছে। যদিও পাল্টা বন দপ্তরের পিকনিকের বিষয়টি মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, পিকনিক রুখতে তাঁদের লাগাতার নজরদারি চলছে।
ডোমকলের জিতপুর ও সংলগ্ন এলাকাজুড়ে একসময়ে ছিল বিশাল বনাঞ্চল। ঘন বনাঞ্চলের কারণে একসময়ে ওই বনের আশপাশ ভিড়তেও ভয় করত অনেকে। তবে এখন ওসব অতীত। এলাকার দাপুটে নেতাদের দৌলতে গত বছর দশকের মধ্যে বনের বেশিরভাগ অংশের বড় বড় গাছগুলি রাতারাতি কেটে হাঁফিস হয়ে গিয়েছে। শুধুই কি তাই ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের কারসাজিতে বন দপ্তরের জমিও নাকে বিভিন্ন নামে রেকর্ড হয়ে গিয়েছে। তবে এসবের মধ্যেও জিতপুর ও আশপাশের কিছুটা এলাকার বনাঞ্চলজুড়ে এখনও নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে গাছগুলি।
এখন শীতকাল তাই পাতাঝরার মরসুম। কিন্তু শীতকাল যেমন একদিকে পাতাঝরার মরসুম তেমন পিকনিকের ভরা মরসুম। আর কাছেপিঠে হওয়ায় পিকনিকের জন্য এখন অনেকের ফেভারিট ডেস্টিনেশন ওই বনাঞ্চল। একেবারে বাজার থেকে জেনারেটর এনে বনাঞ্চলের মধ্যে বক্স বাজিয়ে সঙ্গে চলছে দেদার পিকনিক। বনের মধ্যেই দাপাচ্ছে শব্দ দানব। তবে এর মধ্যে যা সবচেয়ে বেশি শঙ্কার তা হল বনের মধ্যে আগুন জ্বেলে এইধরনের উদ্যাম পিকনিক। পাতাঝরার মরসুমে ওই আগুন ছড়িয়ে পড়ে বড় রকমের বিপদ তৈরি হয়ে যেতে পারে বলেই আশঙ্কা করছে অনেকেই। শুধু পাতাঝরার মরসুমই নয় সরকারি নির্দেশ অনুসারে বছরের কোনও সময়েই সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পিকনিক করার ওপরে রয়েছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। অথচ সেই নিষেধাজ্ঞাকে থোড়াই কেয়ার করে চলছে দেদার পিকনিক। পুরো ঘটনায় বনাঞ্চলের দায়িত্বে থাকা বন দপ্তরের ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
প্রশ্ন উঠছে কিভাবে বন দপ্তরের কর্মীরা থাকার পরেও এভাবে চলছে পিকনিক? এতে যেকোনও সময় বিপদ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। স্কুল শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, কখনও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পিকনিক করা যায় না। এভাবে আগুন জ্বালিয়ে পিকনিকের কারণে যেকোনও সময় বনে আগুন ধরে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বন দপ্তরের তরফে কড়া ভাবে এই ধরনের পিকনিকগুলিকে বন্ধ করানোর প্রয়োজন। যদিও বন দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, এই ধরনের পিকনিকের ঘটনা বনের মধ্যে ঘটেনি। ওই বনাঞ্চল পাহারা দেওয়ার জন্য আমাদের কর্মীরা রয়েছে। তারপরেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে কি না আমরা খতিয়ে দেখছি।